বৃষ্টির মতো রাতে ঝড়ছে কুয়াশা সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। সকালের প্রথম আলোয় সবজি ক্ষেত, ফুলের পাপড়িতে ঝলমল করে ওঠা মুক্তদানার মত শিশির বিন্দু শীতকে জানান দিচ্ছে তার চিরচেনা সেই রুপে। শহর ও গ্রামের চেয়ে শীত যেন কিছুটা ভিন্ন রুপ ধারন করে নদী বেষ্টিত এসব চরাঞ্চলে। শীতের যে দাপট, তার সব টুকু যেন উজার করে প্রয়োগ করেছে চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে। সকালে কখনো সূর্যের দেখা মিলছে আবার কোন দিন মিলছে না। দুপুরের পর থেকে কুয়াশাছন্ন থাকছে চারপাশ।
এমন তীব্র শীতে যখন কাবু শহর ও গ্রাম অঞ্চলের জীবনযাত্রা। তখন এর কয়েনগুন শীতে জুবুথুবু গাইবান্ধার ব্রক্ষপুত্র, যমুনা, তিস্তা ও ঘাঘট নদী তীরবর্তি চরাঞ্চলের মানুষ। চারদিকে কোন স্থাপনা না থাকায় ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়ায় স্থবির যেন জনজীবন। হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় জরোসরো গরুসহ গৃহপালিত পশু। কিন্তু তাতেও যেন থেমে নেই চরের মানুষের জীবনের চাঁকা। ঘুম থেকে উঠেই গৃহবধুর রান্না, বাড়িঘড় পরিচ্ছন্ন রাখা সেই সাথে গৃহপালিত পশুকে খাবার দেয়া। আর তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে বাড়ির গৃহকর্তার নদী পাড়ি দিয়ে কাজের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়া। শীতেও যেন থেমে নেই শিশুদের দুরুন্তপনা।খেলার মাঠ কিংবা খেলার আধুনিক সামগ্রী না থাকলেও থেমে নেই যেন তারা। কখনো গাড়ি বা সাইকেলের পরিত্যাক্ত টায়ার আবার কখনো ফুটবল নিয়ে ধুধু বালিতে খেলায় মত্ত থাকাই যেন সব আনন্দ তাদের।
সড়ক পথে যোগযোগ না থাকায় হাড়কাঁপানো শীতেও কেউ তেমন খোঁজ রাখে না চরাঞলের এসব মানুষের। শেষ বেলায় নৌকায় বাড়ি ফিড়ে কিংবা শিশুদের সেই খেলা শেষে যখন সূর্য় মিশে যায় আকাশের সাথে, কমতে থাকে তাপমাত্রা তখন শেষ ভরসা কাঁথা কিংবা চাদরে শীত নিবারনের চেষ্টা। আর তাতেও না হলে প্রয়োজনীও শীত বস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন চরাঞ্চলের এসব মানুষ। বন্যা, ভাঙ্গনের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এসব মানুষ এখন লড়ছে প্রকৃতির আরেক শক্তি হাড়কাঁপানো শীতের সাথে।