সরবার প্রতিইউনিট বিদ্যুতের দাম ভোক্তা পর্যায়ে আরও ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ টাকা ২৫ পয়সা করেছে। সরকারের নির্বাহী আদেশে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বাড়তি এ দাম আজ বুধবার (১ মার্চ) থেকে কার্যকর হবে। চলতি বছর এ নিয়ে তিনবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতির এই সময়ে আরও হতাশা বাড়লো ভোক্তাদের। এতে করে আবাসিক গ্রাহক, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আরো চাপের মধ্যে পড়লো, যখন সবাই কৃচ্ছ্রসাধনের চেষ্টা করছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর আর্থিক সক্ষমতা সীমিত, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘটনায় তাদের জন্য বিল উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। ফলে অত্যাবশ্যক পণ্য বা সেবা কেনা তাদের পক্ষে আরও কঠিন হয়ে যাবে। অর্থকড়ির টানাটানি থাকায়, অনেক ক্ষেত্রেই এসব পরিবারকে খরচের অগ্রাধিকার খাত ঠিক করতে হয়। তাই বাড়তি বিদ্যুৎ বিল দিতে হলে- খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদার পেছনে তাদের ব্যয় কমাতে হবে।
কৃষকের জন্যও ‘খাঁড়ার ঘা’ হতে চলেছে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, অচিরেই যার পরিণাম দৃশ্যমান হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, এটা হচ্ছে বোরো ধান রোপণের মওসুম, এই সময়ে উৎপাদিত ফসল- দেশের ৫৪ শতাংশ চালের চাহিদা পূরণ করে। বোরো আবাদ সম্পূর্ণরূপে সেচ-নির্ভর। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘটনায় ফসলের উৎপাদন খরচও বাড়বে।
তিনি বলেন, আগে ডিজেলেরও দাম বাড়ানো হয়েছে। এসব দাম বৃদ্ধির ঘটনায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। তারা কম সেচ দিতে বাধ্য হবে। আর সেচ কমানোর অর্থই হলো ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে। জাহাঙ্গীর আলম খান পরামর্শ দেন, এই পর্যায়ে সরকার কৃষকদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির জন্য নগদ সহায়তা বা ভর্তুকি দিতে পারে, এতে তারা প্রত্যাশিত পরিমাণে ধান উৎপাদন করতে পারবে।
বিদ্যুতের আরেক দফা দাম বাড়ানোর আঘাত সামলানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে দেশের অর্থনীতির জন্য অতি-গুরুত্বপূর্ণ তৈরি পোশাক খাতও।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন- ফেডারেশন অব দ্য বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-র সভাপতি জসীম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, গত এক বছরে সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে বার বার বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। এতে আমরা উৎপাদনের সক্ষমতা কমছে এবং আমরা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতাও হারাচ্ছি।
এফবিসিসিআই- এর সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বোঝাটা ভোক্তার ওপরই পড়বে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামালের মতে, জ্বালানির দাম বাড়ানোর প্রভাব ইতোমধ্যেই শিল্প খাতের মুনাফা সীমায় প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, শেষমেষ এই দাম বৃদ্ধির বোঝা ভোক্তাকেই বহন করতে হবে।
গত দুই মাসে এনিয়ে তৃতীয়বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো; এতে যেসব বাসাবাড়িতে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় তাদের মাসিক বিল বাড়বে ১৮২ টাকা। যেসব আবাসিক গ্রাহক ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা হবে ২৮৫ টাকা। তবে একটি প্রক্ষেপণ অনুসারে, এই দাম বাড়ানোয় বছরে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে সরকারের।