গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তাগাদা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ইসিতে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি জানাতে তাগাদাপত্র দেওয়া হয়েছে। তাদের ১৫ দিনের মধ্যে এটা জানাতে বলা হয়েছে।
গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছিল ইসি। জড়িত ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ-সংবলিত ডাকযোগে পাঠানো চিঠিতে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি ইসিতে অবহিত করতে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে না জানালে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছিল। তবে ইসির বেঁধে দেওয়া সময় দুই মাস আগে পার হলেও ইসিকে এখনো অবহিত করা হয়নি। যার কারণে বৃহস্পতিবার নতুন করে ১৫ দিনের সময় দিয়ে আবারো তাগাদাপত্র দিয়েছে।
২৮ মার্চ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কর্তৃপক্ষ অ্যাকশন নিচ্ছে- এমন ৪০টির মতো জবাব পেয়েছেন বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। সিইসি সেদিন বলেন, আমরা যখন চিঠি লিখি, ডিপার্টমেন্টের কিছু রুলস মেনে চলতে হয়।
হয়তো ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং প্রসিডিংসটা চলছে। অনেকের কাছ থেকে আমরা জবাব পাইনি। আমরা দ্বিতীয়বার চিঠি দেব। এরপর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অথবা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের কাছে কিনা, এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের জ্ঞাত করব।
ওই দিন ৪০টির মতো জবাব পাওয়ার বিষয় সিইসি দাবি করলেও বৃহস্পতিবার পাঠানো তাগাদাপত্রে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। বরং ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত কোনো চিঠি তারা এখনো পায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, ইসি থেকে পাঠানো তাগাদা পত্রে গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচনে কর্তব্যরত দায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্বপালনে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ও চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে পত্র প্রাপ্তির
১ মাসের মধ্যে গৃহিত কার্যধারা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার জন্য গত ২০ ডিসেম্বর চিঠি দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে বলা হয়েছে- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অদ্যাবধি উল্লিখিত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ বা গৃহীত কার্যধারা সংক্রান্ত পত্র পাওয়া যায়নি।
গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় পুরো আসনের এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে অনিয়মের কারণে কোনো সংসদীয় আসনের নির্বাচন বন্ধ করার ঘটনা এটাই প্রথম।
পরে ঘটনাটি তদন্ত করে নির্বাচনের দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়মে সম্পৃক্ততার কারণে রিটার্নিং অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, প্রিসাইডিং অফিসার, পুলিশের উপ-পরিদর্শক, নির্বাহী হাকিমসহ ১৩৪ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচনি এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এদের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইসি ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাকি ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন বিভাগকে বলা হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে।